জেনে নিন! কেন বিলুপ্ত হলো ডাইনোসর?

আজ থেকে প্রায় ২১ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে ডাইনোসরদের আবির্ভাব ঘটেছিল। পৃথিবীর বুকে প্রায় ১৫ কোটি বছর ধরে প্রভাব বিস্তার করার পর আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে আমাদের এই গ্রহ থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিলুপ্তির সঠিক কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও সম্ভাব্য কারণগুলো এখানো উল্লেখ করা হলোঃ

১। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনঃ

মেসোজোইক যুগের প্রথমার্ধ পর্যন্ত তৎকালীন জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র ছিল। ডাইনোসররা এ আবহাওয়ায় অভিযোজিত হয়ে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু মেসোজোইক যুগের শেষের দিকে জলবায়ু শীতল ও শুষ্ক হয়ে যায়। এ সময় তারা অতিরিক্ত ঠাণ্ডার কবলে পড়ে। অতিকায় দেহ নিয়ে শীতনিদ্রায় যাওয়ার সুযোগ তাদের ছিল না। তাদের দেহে লোম বা পালক না থাকায় শীত নিবারণের সুযোগও তারা পায়নি। ফলে ডাইনোসররা টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়।

২। জলাভূমির ক্রমহ্রাসঃ

অনেক ডাইনোসর বিস্তীর্ণ অগভীর জলাশয়ে বাস করত। ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে স্থলভাগ উত্তোলিত হতে থাকায় জলাভূমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। ফলে জলাশয়ে বসবাসকারী ডাইনোসরদের বসতির অভাবে এরা টিকে থাকতে ব্যর্থ হয়।

৩। খাদ্যভাবঃ

মেসোজোইক যুগের শেষ লগ্নে জীবজগতে ব্যাপক পরবর্তন ঘটতে থাকে। সাইকাস, মস ও ফার্ন জাতীয় নগ্নবীজী উদ্ভিদের স্থান সপুষ্পক আবৃতবীজী উদ্ভিদ দখল করে নেয়। এসব নতুন উদ্ভিদ তৎকালীন ডাইনোসরদের নিকট খাওয়ার উপযোগী ছিল না। খাদ্যাভ্যাসের (Food habit) পরিবর্তন করতেও এরা ব্যর্থ হয়েছিল। তাই অনেক উদ্ভিদভোজী ডাইনোসর খাদ্যাভাবে মারা যায়। পাশাপাশি উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরের অভাবে মাংসাশী। ডাইনোসরদের খাদ্যের যোগানের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। যার পরিণতি ডাইনোসরদের বিলুপ্তি ত্বরান্বিত করেছিল।

৪। অন্যান্য প্রাণীদের সাথে প্রতিযোগিতাঃ

খাদ্য ও বাসস্থানের স্বল্পতার কারণে ডাইনোসররা নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতী প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল। বিশেষত থেরাপোড জাতীয় ডাইনোসর অন্যান্য উদ্ভিদভোজী ডাইনোসরের উপর চড়া ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতো। এরা বর্তমান কালের বন্য কুকুরের মতো দলবদ্ধভাবে শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়তো। নিজেদের মধ্যে এরূপ প্রতিযোগিতা ডাইনোসরদের বিলুপ্তির অন্যতম কারণ।

৫। অনুন্নত মস্তিষ্কঃ

ডাইনোসরদের দেহের তুলনায় মাথা ও মস্তিষ্ক উভয়ই ছিল অনেক ছোট। উল্লেখ্য, ১৮ ফুট দীর্ঘ দেহের অধিকারী Stegosaurus-এর মস্তিষ্কের ওজন ছিল মাত্র ৭১ গ্রাম। এতো ছোট মস্তিষ্কের কারণে এরা তেমন চতুর হতে পারেনি। তাছাড়া এদের পিটুইটারি গ্রন্থিও ক্ষুদ্র ছিল। এ গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন পর্যাপ্ত না হওয়ায় মানসিক বিকাশ ও বুদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতো। তাই জীবন যুদ্ধে এরা পিছিয়ে পড়েছিল।

৬। অতিকায় দেহের অধিকারীঃ

প্রাথমিক পর্যায়ের ডাইনোসররা খুব বেশি বৃহৎ আকারে ছিল না। এদের আকার ক্রমান্বয়ে বড় ও ভারি হয়েছিল। সর্ববৃহৎ ডাইনোসর Diplodocus-এর দেহ ছিল প্রায় ৮৭ ফুট, আর ওজন ছিল প্রায় ৩৫ টন। এ প্রকাণ্ড ভারি দেহ নিয়ে এরা দ্রুত চলাচলে সক্ষম ছিল না। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে বিপুল সংখ্যক ডাইনোসর মারা পড়েছিল।

৭। রোগ ও মহামারিঃ

অনেকে মনে করেন রোগ ও মহামারি এবং বিকিরণজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে দলে দলে ডাইনোসররা কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।

৮। অগ্ন্যুৎপাতঃ

কোনো কোনো বিজ্ঞানীর ধারণা প্রায় ছয় কোটি বছর আগে পৃথিবীব্যাপী এক বিরাট অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল। এর প্রভাবে সৃষ্ট গ্যাস, ধূলিমেঘ, অম্লবৃষ্টি, উদ্ভিদ নিধন এর মতো সাংঘাতিক বিপর্যয় ডাইনোসরেরা সামাল দিতে পারেনি।

৯। উল্কাপাতঃ

উল্কাপাতবাদীরা মনে করেন, প্রায় ছয় কোটি বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষ লগ্নে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়েছিল এক বিশাল উল্কাপিণ্ড। ফলে পৃথিবীর পাথুরে স্তর এবং উল্কাটি নিজেই জ্বলতে জ্বলতে ধূলিকণায় পরিণত হয়ে ছেয়ে ফেলেছিল পৃথিবীর আকাশ বাতাস। এতে মাসের পর মাস সূর্যালোক ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছাতে পারেনি। সূর্যালোকের অভাবে উদ্ভিদরাজী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। উদ্ভিদভোজী ডাইনোসররা খাদ্যাভাবে মারা পড়েছিল। প্রাণীভোজী ডাইনোসররা তাদের খাদ্য যোগাড় করতে পারেনি। অন্ধকারাচ্ছন্ন সূর্যালোকবিহীন পরিবেশে নেমে এসেছিল হিমশীতল অবস্থা, যা মোকাবিলা করতে পারেনি ডাইনোসররা।

Related Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Clicky