মাছের একটি বিশেষ অঙ্গ রয়েছে যা বায়ুথলি বা বায়ুপটকা (Air bladder/Swim bladder) নামে পরিচিত। কঠিনাস্থি মাছের গলবিল বা গ্রাসনালির পাতলা প্রাচীরবিশিষ্ট থলের ন্যায় যে বর্ধিতাংশ মেরুদণ্ড ও পৌষ্টিক নালির উপরিভাগে অবস্থান করার মাধ্যমে মাছকে পানির বিভিন্ন গভীরতায় স্থির থাকতে সাহায্য করে তাকে বায়ুপটকা বা বায়ুথলি বলে। বায়ুথলির ভেতর O2, CO2 ও N2, ইত্যাদি গ্যাস ভর্তি থাকে। কতিপয় গভীর সমুদ্রের তলদেশে বসবাসকারী মাছ ব্যতীত প্রায় প্রায় সকল Osteichthyes শ্রেণিভুক্ত মাছে বায়ুথলি বিদ্যমান।
বায়ুথলির কাজঃ
মাছের বায়ুথলি নানাবিধ কাজ সম্পাদনে অংশগ্রহণ করে। নিম্নে এদের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি উল্লেখ করা হলোঃ
(ক) উদস্থিতি অঙ্গ (Hydrostatic Organ) হিসেবে বায়ুথলির ভূমিকাঃ
নিঃসন্দেহে মাছের ক্ষেত্রে বায়ুথলি একটি প্রধান ভারসাম্য অঙ্গ। পার্শ্ববর্তী পানি হতে মাছের আপেক্ষিক গুরুত্ব অনেক বেশি এবং এজন্যে মাছ পাখনা না নাড়লে পানিতে ডুবে যাবার কথা। কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাই যে, একটুও পাখনা না নাড়ায়ে মাছ একস্থানে পানিতে স্থির থাকে। বায়ুথলিতে বিশেষ পরিমাণে বাতাস ভর্তি করে কিংবা বায়ু শূন্য করে দিয়ে মাছ তার শরীরের আপেক্ষিক গুরুত্ব পার্শ্ববর্তী পানির সমান করতে পারে এবং এভাবে পানির যেকোনো গভীরতায় মাছ পাখনা না নাড়িয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে স্থির থাকতে পারে।
(খ) শ্রবণ অঙ্গ (Auditory Functions) হিসেবে বায়ুথলিঃ
বায়ুথলি দ্বারা মাছ শব্দ গ্রহণ করতে পারে। শব্দ তরঙ্গ বায়ুথলি হতে ওয়েবেরিয়ান অসিকল (weberian ossicles) নামের কয়েকটি অস্থির ভেতর দিয়ে কর্ণে গমন করে। শব্দ শ্রবণের মাধ্যমে এরা শিকারির আক্রমণ বুঝতে পারে (ট্রাইপাস, ইন্টারক্ল্যারিয়াম, স্কেফিয়াম এবং ক্লসট্রাম ও অসিকলের অস্থি।
(গ) শব্দ তৈরি অঙ্গ (Sound Producing Organ) হিসেবে বায়ুথলিঃ
অনেক মাছের বায়ুথলির গাত্রে Sonorific পেশির ঘর্ষণের মাধ্যমে শব্দ তৈরি করে থাকে। যেমন- Mystus, Clarias এবং Heteropneustes ইত্যাদির বায়ুথলিতে খুব দ্রুত বায়ু প্রবেশ কিংবা বের করার মাধ্যমে বাঁশির ন্যায় কিংবা ঘড়ির কাঁটার ন্যায় শব্দ উৎপাদন করে।
(ঘ) শ্বসন অঙ্গ (Respiratory Organ) হিসেবে বায়ুথলিঃ
বায়ুথলির প্রধান কাজ হচ্ছে সম্ভবত শ্বসনে সহায়তা করা। যেমন- Polyterus, Amia এবং Lepidosteus-এ বায়ুথলির মুখ্য কাজ শ্বসন ক্রিয়া সম্পন্ন করা। Dipnoi শ্রেণির মাছে বায়ুথলি উভচরদের ফুসফুস সদৃশ। কতিপয় মাছে এরা ফুসফুসের ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে বায়ুথলির মাধ্যমে এরা পানি থেকে O2 গ্রহণ করে ও CO2 ত্যাগ করে থাকে (যেসব ক্ষেত্রে জলাশয় ও ডোবায় CO2 এর পরিমাণ বেশি সেসব ক্ষেত্রে)। ঐ সকল মাছ বায়ুর O2 সংগ্রহের জন্য পানির পৃষ্ঠভাগে গমন করে এবং এরা হাঁ করার মাধ্যমে বায়ু সংগ্রহ করার সময় CO2 পানিতে ত্যাগ করে। তাছাড়া অধিকাংশ মাছে বায়ুথলি O2 সঞ্চয় করার কাজে ব্যবহৃত হয়, যা তাদের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্যবহার করে থাকে। ফাইসোসটোমাস ও ফাইসোক্লিসটাস উভয় ধরনের মাছে এ প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। যেমন- Percafluviatilis, Tinca, Opsanus tau, Cyprinus, Carpio, Carassius auratus ইত্যাদি মাছে এ পদ্ধতি দেখা যায়।
(ঙ) সংবেদী অঙ্গ (Sensory Organ) হিসেবে বায়ুথলিঃ
বায়ুথলি মাছের সংবেদী অঙ্গ হিসেবে ক্রিয়া করে। যেমন- মাছ যখন পানির বিভিন্ন গভীরতায় দৌড়াদৌড়ির মাধ্যমে পানির ও দেহের চাপে ভারসাম্য আনে তখন বায়ুথলিতে বায়ুর ঘনত্ব বিরলীকরণ (হালকা বা পাতলাকরণ) ঘটে। এতে বায়ুথলির প্রাচীরের বিকৃতি (Deformation) ঘটায়। এটা চাপ সংগ্রাহক অঙ্গ। যেমন- ব্যারোমিটার, ম্যানোমিটার অথবা হাইড্রোফোনের ভূমিকা পালন করে। যার মাধ্যমে মাছ পানির গভীরতা বা স্থির অবস্থা বুঝতে পারে। পরবর্তীতে পানির গভীরতা ও চাপের ভারসাম্য রক্ষার জন্য বায়ু প্রবেশ করিয়ে বায়ুথলিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।