অ্যালকোহল উৎপাদনঃ
অ্যালকোহল একটি অন্যতম দ্রাবক। পানির পরই এর অবস্থান। কাঁচামাল হিসাবে এটি গবেষণাগারে ও রসায়ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। অণুজীবের কার্যকারিতার ফলে প্রকৃতিতে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। বাণিজ্যিকভাবে অণুজীবের ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। ঈস্ট নামক ছত্রাক অ্যালকোহলের ফার্মেন্টেশনের সাথে জড়িত। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে একটি শর্করাজাতীয় পদার্থ থেকে ইথাইল অ্যালকোহল উৎপন্ন করে। মূল বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-
C6H12O6 → 2C2H5OH + 2CO2
(Glucose) (Ethanol)
এই বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে Saccharomyces cerevisiae এই বিক্রিয়ায় সাবস্ট্রেট বা কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় শ্বেতসার বা অন্য কোন শর্করা আখের রস বা ঝোলাগুড় বা চিটাগুড়।
শিল্পকারখানায় ইথানল প্রস্তুতের সময় Saccharomyces cerevisae ছাড়াও Saccharomyces uvarium, Saccharomyces carlsbergensis, Candida brassicae, Zynomons mobilis প্রভৃতি অণুজীব ব্যবহৃত হয়। শিল্পকারখানায় ঈস্ট অপেক্ষায় Zymomons ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে অধিক পরিমাণে ইথানল পাওয়া যায়।
আখের রস থেকে চিনি উৎপাদন করার পর যেন ঘন সিরাপের মতো তরল পদার্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে ঝোলাগুড় বা চিটাগুড় (Molasses) বলে। চিটাগুড়ের মধ্যে চিনি থাকে। এই চিনিকে ফার্মেন্ট করে অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়। এই পদ্ধতিকে অ্যালকোহলিক ফার্মেন্টেশন বলে। Saccharomyces Cerevisae নামক ছত্রাক ইনভার্টেজ নামক এনজাইমের সহায়তায় চিনিকে ভেঙে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত করে। পরবর্তীতে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ জাইমেজ নামক এনজাইমের সহায়তায় ভেঙে অ্যালকোহল ও CO2-এ পরিণত হয়। বিক্রিয়াটি নিম্নরূপ-
C12H22O11 + H2O → C6H12O6 + C6H12O6
C6H12O6 → 2C2H5OH + 2CO2
ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় চিনি থেকে ইথানল প্রাপ্তির পরিমাণ দেখা যাক। এ প্রক্রিয়ায় ৪৮% অর্থাৎ ১০০ গ্রাম বিশুদ্ধ গ্লুকোজ ৪৮.৪ গ্রাম ইথানল, ৪৬.৬ গ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড, ৩.৩ গ্রাম গ্লিসারিন এবং ১.২ গ্রাম ঈস্ট পাওয়া যায়।
এখন আমরা ফার্মেন্টেশন পদ্ধতিতে অ্যালকোহল প্রস্তুত প্রণালী দেখবঃ
মূলত ফার্মেন্টেশন পদ্ধতিতে শিল্পক্ষেত্রে ইথানল প্রস্তুত করা হয়। এ কাজে সাধারণত Saccharomyces cerevisae নামক ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। কারণ এই ছত্রাকটির সুগার ও অ্যালকোহল সহ্য ক্ষমতা অনেক বেশি। কাঁচামাল হিসাবে সাধারণত চিটাগুড় (Molasses) ব্যবহৃত হয়। এতে প্রায় ৫০% ফার্মেন্টেশন সুগার থাকে। চিটাগুড়কে প্রথমে পাতিত পানির সাথে মিশ্রিত করে এর সাথে কিছু নাইট্রোজেন যৌগ (যেমন-ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম সালফেট বা অ্যামোনিয়াম ফসফেট) যৌগ করা হয়। আবাম মাধ্যমে PH-এর মান 5.0 রাখা হয়। স্টেনলেস স্টিল নির্মিত একটি বৃহৎ গভীর ট্যাংকের ভিতর আবাদ মাধ্যমে নিয়ে থাকে সক্রিয়ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ঈস্ট কালচার দেওয়া হয়। 25-30 ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় 24-36 ঘণ্টা ফার্মেন্টেশন ক্রিয়া চলতে দেওয়া হয়। ঈস্ট কোষগুলো নিচে জমা হয় এবং সেগুলোকে বিশেষ পদ্ধতিতে পৃথক করা হয়। অতঃপর ফার্মেন্টেশন Mash-কে পাতন করে তা Rectifier-এর মধ্য দিয়ে চালিত করা হয়। এর ফলে ইথানল পাওয়া যায়। পাতন প্রক্রিয়ায় ইথানলকে বিশুদ্ধ করা হয়। ফার্মেন্টেশন কোষ হওয়ার পর অণুজীবের কোষগুলো বায়োমাস হিসাবে পৃথক করা এবং কোন ক্ষেত্রে পশু খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
অ্যালকোহলের ব্যবহারঃ
- পারফিউম শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
- মোটর জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
- বিশুদ্ধ ইথানল পেট্রোল, ডিজেলের সাথে মিশ্রিত করে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যায়।
- বেভারেজ তৈরিতে (যেমন-বিয়ার, ওয়াইন, হুইস্কি) ব্যবহৃত হয়।
- বিভিন্ন পরীক্ষাগারে বিকারক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- বিভিন্ন পদার্থের দ্রাবক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।